ক্যান্সার প্রতিরোধ দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ক্যান্সার প্রতিরোধ দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ক্যান্সারমুক্ত থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের জুড়ি নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে বেশ কয়েক প্রকারের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিছু খাবারের প্রভাবে উল্টো ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়েও যেতে পারে। ক্যান্সার ও খাদ্যের মধ্যকার সম্পর্ক ও সুস্থতায় করণীয় জানাচ্ছেন ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেডের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি  বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী মনজুর কাদের

প্রচলিত প্রবাদ, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’ দেহের সুস্থতা ধরে রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ক্যান্সার থেকেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। সুস্থতার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।

১৯৬০ সাল থেকেই খাদ্যদ্রব্য, পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, খনিজদ্রব্য, খাদ্যের রঞ্জকদ্রব্য ইত্যাদির সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আজ এটি স্পষ্ট যে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। কী ধরনের খাবার বেশি খেলে কী ধরনের ক্যান্সার বেশি হয় আবার কোন খাবার কম খেলে বা বাদ দিলে কোন ক্যান্সার কম হয়, বিজ্ঞানীদের কাছে তা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার হয়ে উঠছে। আজ বিজ্ঞানীরা জোর গলায় বলছেন, সঠিক খাবারদাবারই পারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে।

খাবারের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সারের মধ্যে আছে স্তন, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় ও যকৃৎ ক্যান্সার। কিছু জরিপে দেখা যায়, স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে খাবারের তালিকায় থাকা মাংস ও চর্বির পাশাপাশি দেহের অতিরিক্ত ওজনেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। একইভাবে বলা যায়, স্তন ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে প্রাণিজ চর্বির একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। প্রাণিজ সম্পৃক্ত চর্বি রক্তের এস্ট্রাডিওল হরমোনের উচ্চমাত্রা সৃষ্টিতে সহায়তা করে, যা পরবর্তী সময়ে কাজ করে কারসিনোজেন হিসেবে এবং স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

অতিরিক্তি অ্যালকোহল গ্রহণ করলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। খাদ্যে ভিটামিন এ ও ই-এর অভাব এবং কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণের সঙ্গেও স্তন ক্যান্সারের বিশেষ যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আছে ফলমূল, শাক-সবজি, গমের আটা, উদ্ভিদজাতীয় তেল ও তেলজাত পদার্থ; যেমন—সয়াবিন, পাম অয়েল, নারকেল ইত্যাদি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফলমূল, শাক-সবজি ও আটায় যে আঁশ এবং পুষ্টি উপাদান আছে, সেসব স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তা ছাড়া আঁশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল কম খেলেও এই ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ে।
ক্যান্সার ও খাবারের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিছু খাবারের কারণে যেমন ক্যান্সার হতে পারে, তেমনি কিছু খাবার উল্টো ক্যান্সার থেকে রক্ষাও করতে পারে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সামগ্রিক ক্যান্সারে আক্রান্তের ঘটনার ৩৫ শতাংশ হয় মূলত খাবারের কারণেই।
অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন মানুষের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে পুষ্টিহীনতাও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তবে একটু সচেতন হলে, খাদ্যাভ্যাসের নিয়ম-কানুন মেনে চললে ক্যান্সারসহ বহু রোগ থেকে দূরে থাকা যাবে।

করণীয়
সর্বোপরি ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার সহজ উপায় স্বাস্থ্যকর জীবন চর্চা করা। রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে। এর মধ্যে আছে—
►   ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল বা মদ পরিহার করতে হবে।
►   অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
►   আর্সেনিকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলতে হবে।
►   রেডিয়েশন বা বিকিরণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
►   ঝুঁকিপূর্ণ মেলামেশা বর্জন করতে হবে।
►   স্বাস্থ্যকর খাবার; যেমন—প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
►   কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম, পরিচ্ছন্নতা, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। 
►   হেপাটাইটিস বি ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা নিতে হবে।
 

চিকিৎসা
►   ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যদি ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেয়, ভয় না পেয়ে তা দ্রুত নির্ণয় এবং চিকিৎসার পদক্ষেপ নিতে হবে। শুরুতেই নির্ণয় করা গেলে ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য।
►   প্রাথমিক অবস্থায়ক্যান্সার নির্ণয়ে স্ক্রিনিং করা জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিরোধ সম্ভব।
►   অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সার রোগে যারা আক্রান্ত, সেসব ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পেলিয়াটিভ কেয়ার প্রদান করা জরুরি। এর মাধ্যমে রোগীদের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা এবং তাদের আবেগ, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে রোগীদের জীবনের মান বজায় রাখতে হবে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট স্থাপন বা সংযোজন করা অতি জরুরি।

রোজায় খাবার দাবার যেমন হওয়া উচিত পরবর্তী

রোজায় খাবার দাবার যেমন হওয়া উচিত

কমেন্ট