খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য

খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য

কিছু মানুষের জন্য খেজুর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে

খেজুর একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়। এটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, উচ্চ শক্তিসম্পন্ন এবং স্বাস্থ্য উপকারী উপাদানে ভরপুর। খেজুর প্রধানত কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজসমৃদ্ধ।

খেজুর শুধু সুস্বাদু নয়, বরং এটি একটি চমৎকার পুষ্টিকর খাদ্য যা শক্তি জোগায়, হজমশক্তি বাড়ায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। নিয়মিত পরিমাণমতো খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে পাওয়া যায়:

  • শক্তি: ২৭৭ ক্যালোরি
  • কার্বোহাইড্রেট: ৭৫ গ্রাম (প্রধানত প্রাকৃতিক চিনি – ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ)
  • প্রোটিন: ২ গ্রাম
  • ফাইবার: ৬.৭ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০.১৫ গ্রাম
  • ভিটামিন: বি-কমপ্লেক্স (বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬), ভিটামিন কে
  • খনিজ: পটাসিয়াম (৬৯৬ মিগ্রা), ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিংক

স্বাস্থ্য উপকারিতা

শক্তি বৃদ্ধি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে : খেজুরে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ) থাকায় এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। গবেষণা অনুসারে, খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড) স্মৃতিশক্তি ও মানসিক কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক : খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ করে : খেজুরে থাকা পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং এলডিএল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) কমায়, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে : ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় খেজুর হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে : খেজুরে প্রচুর আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা

২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরে থাকা পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ ও ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ২০১৫ সালের আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত খেজুর খাওয়া অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং পেটের সমস্যা কমায়। ২০২০ সালের এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, গর্ভবতী নারীদের জন্য খেজুর জরায়ুর প্রসারণে সহায়তা করে, যা স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

সতর্কতা

যদিও খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এটি অতিরিক্ত বা নিয়মিত গ্রহণ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে উল্লেখিত ব্যক্তিরা খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন:

ডায়াবেটিস রোগীরা : খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ) উচ্চ মাত্রায় থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ৭৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত খেজুর খাওয়া উচিত এবং খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ওজন বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা : খেজুর উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত ফল। বেশি পরিমাণে খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের দিনে ২-৩টির বেশি খাওয়া উচিত নয়।

হজমের সমস্যা আছে যাদের : অধিক ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত খেজুর খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে যারা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা সংবেদনশীল অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সতর্ক থাকা উচিত।

কিডনি রোগীরা : খেজুরে পটাসিয়াম বেশি পরিমাণে থাকে (প্রতি ১০০ গ্রামে ৬৯৬ মিগ্রা), যা কিডনি ফেইলিউর বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাসিয়াম বের হতে পারে না, যা হৃদস্পন্দনের অনিয়ম ও অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যালার্জি আক্রান্তরা : কিছু মানুষের খেজুরের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা চুলকানি, ফোলা, শ্বাসকষ্ট, বা ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদি খেজুর খাওয়ার পর এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তবে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নিম্ন রক্তচাপের রোগী : খেজুরে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে (হাইপোটেনশন), তাদের বেশি খাওয়া উচিত নয়।

গর্ভবতী নারী : গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বেশি খেজুর খেলে জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে। যদিও এটি স্বাভাবিক প্রসবে সহায়ক হতে পারে, তবুও বেশি খাওয়া অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো।

 

রোজায় খাবার দাবার যেমন হওয়া উচিত পূর্ববর্তী

রোজায় খাবার দাবার যেমন হওয়া উচিত

দিনে কতটুকু ভাত খাবেন? পরবর্তী

দিনে কতটুকু ভাত খাবেন?

কমেন্ট