রোজায় খাবারদাবার

রোজায় খাবারদাবার

অনেকেই রোজায় অতিরিক্ত খাবার খান, এতে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে এবং সময়ের তারতম্যের কারণে শারীরিক ও জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়। অথচ সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে রোজা রাখলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। 

রোজায় রান্নায় নয়, ইবাদতে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। রোজা রেখে পরিবারের সবার জন্য অনেক রান্না করে বরং পরিশ্রম ও সময় দুটিই ব্যয় হয়। এ সময় এমন কিছু খাওয়া উচিত, যা স্বাস্থ্যকর, তৈরিতে সময় কম লাগে ও ঝামেলা কম হয়। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে চুলার কাছে বেশিক্ষণ থাকলে যিনি রান্না করবেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই হালকা কিছু মেন্যু যেমন ফ্রুট সালাদ, দই দিয়ে ফলের স্মুদি, দুধ ও ওটস বা দুধ ও সিরিয়াল হলে ভালো হয়। চিঁড়া-দই, মুড়ি-দই ইত্যাদি খাবার রান্নার প্রয়োজন হয় না, পরিশ্রমও কম হয়; আবার স্বাস্থ্যকরও বটে।

স্বাস্থ্যকর ইফতার
ইফতার স্বাস্থ্যসম্মত ও ভেজালমুক্ত হওয়া অনেক জরুরি। সঠিক মেন্যু অনুযায়ী পরিমিত ইফতারি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

তরল : ইফতারের জন্য নানা রকম চিনির শরবত তৈরি করা হয়। এই গরমে শরীর যেন পানিশুণ্য না হয় এজন্য শরবত বা তরলের বিকল্প নেই। ইফতারে পানি সবচেয়ে উত্তম, তবে তার সঙ্গে ডাবের পানি, লাচ্ছি, ঘরে তৈরি ফলের রস, লেবু পানি অনেক উপকারী। ফলের রসের প্রাকৃতিক চিনি শরীরে এনার্জি দেয়। তাই ঘরে তৈরি ফলের রসে বাড়তি চিনির প্রয়োজন হয় না।

ফল : ইফতারে সবাই খেজুর খেয়ে থাকেন। এটি ইফতারের জন্য সর্বোত্তম খাবার। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল ইফতারে খাওয়া উচিত। যেকোনো ফল বা মিক্সড ফল একটু দই দিয়ে মেখে খেলে ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন—সব পাওয়া যায়। যাঁদের এসিডিটি রয়েছে তাঁরা ফলের সঙ্গে একটু দই ব্লেন্ড করে খেলে উপকার পাবেন।

দই-চিঁড়া বা মুড়ি : দই হজমে সহায়তা করে এবং ক্যালসিয়াম প্রোটিনের ভালো উৎস। চিঁড়া-দই বা মুড়ি একটু ফলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সহজে হজম হয়। এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ হবে।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন : ভাজাপোড়া খাবার, রঙিন ও শক্ত খাবার, পাউরুটি বা বেকারির খাবার, কাঁচা সবজি, বাদাম ইত্যাদি।

রাতের খাবার
তারাবি নামাজের পর রাতের খাবার সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। তবে এ সময় খুব বেশি খাবার খাওয়া ঠিক নয়।

স্যুপ : রাতের খাবার হালকা আবার পুষ্টিকর হওয়া দরকার। এজন্য স্যুপ একটি আদর্শ মেন্যু হতে পারে। সবজি, মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপে এক চামচ ওটস দিলে তা প্রায় খাবারের কাজ করে।

দুধ-রুটি : একটি রুটি ও দুধ, সঙ্গে দুটি খেজুর পুষ্টির পাশাপাশি সুন্দর ও সুস্থভাবে রোজা রাখতে সাহায্য করবে।

হালিম : চাল, ডাল ও মাংস দিয়ে ঘরে তৈরি হালিম বা খিচুড়ি একটু লেবু দিয়ে তারাবির পর খেলে তা রাতের উত্তম খাবারের কাজ করে। প্রোটিনযুক্ত হালিম গর্ভবতী মা, স্তন্যদানকারী মা ও কম বয়সীদের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর।

সাহরিতে যা খাবেন
সঠিক সাহরি আপনাকে সতেজ ও ক্লান্তিবিহীনভাবে রোজা রাখতে সাহায্য করবে। কোনো ধরনের শারীরিক অসুবিধা ছাড়াই ভালোমতো রোজা রাখতে সঠিক ও সুষম সাহরির কোনো বিকল্প নেই।
শ্বেতসারজাতীয় খাবার : সাহরিতে শ্বেতসারজাতীয় খাবার, যেমন ভাত, আলু, রুটি (নরম) ইত্যাদি খুব ভালো। সহজে হজম হয় ও শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায় এমন খাবার বাছাই করুন। ভাতের সঙ্গে মাছ বা দুধ বা ডিম সাহরিতে পুষ্টি আরো বৃদ্ধি করে।

ওটস : উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ ওটস সাহরির জন্য খুব উপকারী। দুধ বা দইয়ের সঙ্গে ওটস, খেজুর বা কলা মিশিয়ে খেলে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া যায়।

পাউরুটি : ইফতারে ভালো না হলেও সাহরিতে সাদা নরম পাউরুটি সাইড কেটে দুধ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

দুধ : দুধ হলো আদর্শ খাবার, যা থেকে সব রকম পুষ্টি পাওয়া যায়। সাহরির পর এক কাপ দুধ খেলে শরীর ভালো শক্তি পায় ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।

সাহরি না খাওয়া নয় 
সাহরি কম খেয়ে বা একেবারে না খেয়ে রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সাহরি না খেলে বা কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি, ক্লান্তিভাবসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

মোটকথা, রোজা মানে সংযম। তবে সংযমের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সঠিক পুষ্টিকর খাবার রোজা-পরবর্তী বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। ভাজাপোড়া খাবার রক্তে চর্বি বাড়িয়ে দেয়, আবার মিষ্টি খাবার ওজন ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। রঙিন খাবার কিডনির ক্ষতি করে থাকে। তাই ঘরে তৈরি স্বাভাবিক খাবার খেলে দেহের এসব ক্ষতি মোকাবিলা সহজ হয়।

দিনে কতটুকু ভাত খাবেন? পূর্ববর্তী

দিনে কতটুকু ভাত খাবেন?

গ্রিন টি যেভাবে পান করবেন পরবর্তী

গ্রিন টি যেভাবে পান করবেন

কমেন্ট