বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। প্রতি বছর হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য হৃদরোগ জটিলতায় লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। বাংলাদেশেও হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি এর প্রধান কারণ। অথচ এসব মৃত্যুর অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য — যদি মানুষ সচেতন হয় এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে দেশের প্রথম জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আজ সোমবার বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ আলোচনা সভা ও পেশেন্ট ফোরামের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে হৃদরোগের কারণ, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি, হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায়, হার্ট অ্যাটাকের গোল্ডেন আওয়ার ও তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এবছর বিশ্ব হার্ট দিবসের প্রতিপাদ্য 'ডোন্ট মিস এ বিট'।
পেশেন্ট ফোরামে অংশ নেন, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এ. কিউ. এম. রেজা, সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শামস মুনওয়ার, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আতিকুর রহমান, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তামজীদ আহমেদ, এভারকেয়ার হসপিটালস,বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের কোঅর্ডিনেটর ডা. তাহেরা নাজরীন, হার্ট ফেইলিওর ও অ্যারিদমিয়া ইউনিটের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. এম. আতাহার আলী, নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. নিঘাত ইসলাম, কার্ডিওথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর ডা. মো. জুলফিকার হায়দার, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সোহেল আহমেদ, কার্ডিওথোরাসিক এনেস্থেসিয়ার সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর ডা. নিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটালস বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ডা. রত্নদীপ চাস্কার এবং গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ।
পেশেন্ট ফোরামে বিভিন্ন রোগী ও তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞবৃন্দ রোগীদের হৃদরোগ বিষয়ক নানা সমস্যা ও রোগ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেন। মত বিনিময়কালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি হৃদস্পন্দনের গুরুত্ব তুলে ধরে হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। সেসময় বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অনিয়মিত স্পন্দনের মতো উপসর্গ অবহেলা না করার পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা গেলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা, ধূমপানসহ বংশগত কারণেও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন, যেমন সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, ধূমপান বর্জন, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদির মাধ্যমে হার্ট সুস্থ রাখা সম্ভব বলে তারা পরামর্শ দেন।
এছাড়াও, মা ও শিশুর হার্টের যত্ন নিয়েও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। জন্মগত হৃদরোগ প্রতিরোধে পরিকল্পিত গর্ভধারণের তিন মাস আগে এমএমআর টিকা, ডায়াবেটিস মেলাইটাস নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভাবস্থায় টেরাটোজেনিক ওষুধ পরিহারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তারা আরো বলেন, শিশুর জন্মগত হৃদরোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের ফলোআপ করা জরুরী।
বক্তারা আরো বলেন, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা দেশের মাটিতে দিচ্ছে বিশ্বমানের কম্প্রিহেনসিভ কার্ডিয়াক-কেয়ার। ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি; ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি; হার্ট ফেইলিওর অ্যান্ড অ্যারিদমিয়া ইউনিট; কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জারির মতো বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে এখানে।
কমেন্ট