'দেশে প্রায় চার কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে'

'দেশে প্রায় চার কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে'

দেশে প্রায় চার কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। এর মধ্যে পুরোপুরি কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ। কিডনি বিকল হলে তার সর্বোত্তম চিকিৎসা কিডনি প্রতিস্থাপন করা। ১৯৮২ সালে দেশে প্রথম জীবিত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। কিন্তু প্রচুর মানুষের কিডনি বিকল হচ্ছে বলে কিডনি দাতার অভাব বেশ প্রকট। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রথম মরনোত্তর কিডনি প্রতিস্তাপন হয়। আইনে বা ধর্মে কোন বাঁধা না থাকলেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। অথচ মরনোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন ধারাবাহিকভাবে চালু থাকা খুব জরুরী। মরনোত্তর অঙ্গদানে মানুষকে মোটিভেশন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন ইসলামিক স্কলারগণ। কোরিয়ার সাথে যৌথ সহায়তায় কিডনি ফাউন্ডেশন সুষ্ঠ মরনোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালাতে চায়।

শনিবার (৩ মে) কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপি ৫ম বাংলাদেশ-কোরিয়া ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্সের উদ্বােধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ নজরুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ক্লাব ঢাকা উত্তরের সাবেক সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য দেন কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন রুবেল, মুফতি আব্দুল আজিজ প্রমূখ। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান কিডনি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। আগামী ৫মে এই সম্মেলন শেষ হবে বলে জানা গেছে। 

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য মরনোত্তর অঙ্গ এবং টিস্যু প্রতিস্থাপন। বক্তারা বলেন, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, হৃদপিন্ড এবং বিভিন্ন টিস্যু যেমন: কর্ণিয়া, হৃদপিন্ডের ভাল্ব, মেরুমজ্জা, চামড়া ইত্যাদি সাফল্যের সঙ্গে প্রতিস্থাপন সম্ভব। চিকিৎসা ব্যবস্থার যে উন্নতি হচ্ছে তা শরীয়তসম্মত। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যাবে এবং অঙ্গ প্রদান করার পর দাতা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হলে ইসলামে অঙ্গ দানে কোন বাঁধা নেই। তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে কোন লেনদেন করা যাবে না।  

সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে যেখানে মরোনত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং এই পদ্ধতি বাংলাদেশে ধারাবাহিক প্রয়োগের ব্যাপারে আলোচনা সহ হাতে কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বৈজ্ঞানিক সেসন পরিচালনা করবেন দেশ বিদেশের খ্যাতনামা কিডনি রোগ ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণে কিডনি রোগী আছে, সে পরিমানে ডায়ালাইসিস সেন্টার বা মেশিন নেই। সুতরাং রোগ প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজে সবাইকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এগিয়ে আনতে হবে। আমি কিডনি ফাউন্ডেশনের এই অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, মরনোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অঙ্গ সংগ্রহ করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এসবের জন্য দরকার প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি যার মাধ্যমে সফল মরেনাত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, আমরা প্রযুক্তি ও জ্ঞানে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে জীবিত ও মৃত মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ইতিমধ্যে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে গিয়েছি, আবার প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এজন্য দরকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা। ইসলামিক স্কলারদেরকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জোর আহবান জানাচ্ছি।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শুরুর দিকে কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। কিডনি সুস্থ রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতন থাকা। এই রোগের বিশেষ কোনো প্রাথমিক লক্ষণ থাকে না। যখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় ততক্ষণে কিডনির প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ভাগই বিকল হয়ে যায়। এ জন্য কিডনির রোগ প্রতিরোধে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির প্রদাহ ও স্থূলতা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। তাহলেই এই রোগটি প্রতিরোধ করা যাবে।

 

অধ্যাপক রাশিদা বেগমের নেতৃত্বে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার যুগান্তকারী প্রযুক্তি প্রয়োগ
পরবর্তী

অধ্যাপক রাশিদা বেগমের নেতৃত্বে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার যুগান্তকারী প্রযুক্তি প্রয়োগ

কমেন্ট