চীনা হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে করার দাবীতে ঢাকায় মানববন্ধন

চীনা হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে করার দাবীতে ঢাকায় মানববন্ধন

দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড় একটি ঐতিহ্যবাহী, বৈচিত্র্যময়, পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জেলা হিসেবে ধরা হয় পঞ্চগড়কে। অথচ চিকিৎসা সুবিধার স্বল্পতায় ১২ লাখ লোক বসবাসের এই জেলা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হিসেবে পরিচিত। রংপুর বিভাগের তিনটি জেলায় মেডিকেল কলেজ থাকলেও এই জেলায় এখনো গড়ে উঠেনি ভালো মানের কোন হাসপাতাল। স্বল্প আয়ের এই জেলার মানুষ অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে রংপুর, দিনাজপুর বা ঢাকায় যেতে হয়। দু:খজনক হলো, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া গুরুতর ও জটিল রোগীগুলোর বেশিরভাগই এসব হাসপাতালে পৌঁছার আগে রাস্তাতেই মারা যায়।

এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল, পঞ্চগড়ে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করা হোক। জনগণের দাবীকে পাশ কাটিয়ে বিগত সরকারের আমলেে এটা নিয়ে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। তাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এখন সময় এসেছে ন্যায্য দাবী আদায়ের। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যে এক হাজার শয্যার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের আলোচনা চলছে, সেটি দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা এই পঞ্চগড়েই স্থাপন করতে হবে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পঞ্চগড় জেলা সমিতি ঢাকা আয়োজিত ‘চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতাল পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবিতে’ মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পঞ্চগড় জেলা সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ড. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সমিতির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আইনুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সফিউল আলম, আনজারুল হক, মুক্তার আলম, মাখদুম মাসুম মাশরাফি যুক্তি, মাসুদ, সরোয়ারসহ জেলা সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পঞ্চগড় জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে জানানো হয়,  ২০২৩ সালে চীনের রাষ্ট্রদূত পঞ্চগড়ে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ভারত সরকারের আপত্তির কারনে সেটি আলোর মুখ দেখেনি। ভারত সরকারকে খুশি করতে হাসপাতালটির কাজ বন্ধ করে দেয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার।

বক্তারা এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পঞ্চগড়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল স্থাপন হলে ভারত, নেপাল, ভূটানসহ বিদেশি রোগীদের টার্গেট করে এখানে মেডিকেল ট্যুরিজম গড়ে তোলা সম্ভব। কেননা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার, হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। পঞ্চগড়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হলে ভুটান, নেপাল ও চীনের ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসবেন। 

মোটকথা, পঞ্চগড়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল হলে এটি হবে উত্তরাঞ্চলের জন্য স্বাস্থ্য বিপ্লব, সীমান্ত বাণিজ্যের নতুন দিক, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির ইঞ্জিন হবে চাঙ্গা, মেডিকেল ট্যুরিজমের হবে নতুন হাব। তাই, চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালটি পঞ্চগড়েই স্থাপন করা হোক। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

 

‘হিমোফিলিয়া রোগ নিয়ে কুসংস্কার আছে, দরকার ব্যাপক সচেতনতা’ পরবর্তী

‘হিমোফিলিয়া রোগ নিয়ে কুসংস্কার আছে, দরকার ব্যাপক সচেতনতা’

কমেন্ট