সেন্সরি এক্টিভিটি হলো এমন সব খেলা বা কাজ যা শিশুর ইন্দ্রিয় (৫টি প্রধান ইন্দ্রিয়—চোখ, কান, নাক, জিভ, ত্বক) ব্যবহার করে শেখার সুযোগ করে দেয়। অর্থাৎ, এই এক্টিভিটি বা চর্চাগুলো শিশুর স্পর্শ, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ এবং দৃষ্টির মাধ্যমে তার পরিবেশকে বুঝতে শেখায়। যেমন, একটি কার্যক্রমে শিশুদের চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন জিনিস স্পর্শ করতে দেওয়া হয় এবং এরপর তারা কী জিনিস স্পর্শ করছে তা অনুমান করে বলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের স্পর্শগ্রাহ্যতা, মনোযোগ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি শিশুরা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা তাদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এবং চিন্তাশক্তি বিকাশে সহায়তা করে।
উপকারিতা:
১. সেন্সরি এক্টিভিটির মাধ্যমে শিশুর ব্রেইন বা মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের সংযোগ (নিউরাল কানেকশন) বাড়ে।
২. মোটর স্কিল উন্নত করে:
ফাইন মোটর স্কিল: হাত ও আঙুলের নিয়ন্ত্রণ (যেমন লেখা, আঁকা)
গ্রস মোটর স্কিল: পুরো শরীরের মুভমেন্ট (যেমন দৌড়ানো, লাফানো)
মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়: শিশু যখন কিছু অনুভব করে, তখন তার মনোযোগ বাড়ে এবং শেখার আগ্রহ তৈরি হয়।
ইমোশন কন্ট্রোল শেখায়: সেন্সরি এক্টিভিটি শিশুর মধ্যে শান্ত থাকা, রিলাক্স থাকা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
ভাষা শেখার প্রক্রিয়া উন্নত করে: যখন শিশু কিছু অনুভব করে এবং তা বোঝাতে চেষ্টা করে, তখন সে শব্দ শেখে এবং যোগাযোগ শেখে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য খুব উপকারী: যেমন অটিজম, ADHD, স্পিচ ডিলে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সেন্সরি এক্টিভিটি অত্যন্ত কার্যকরী থেরাপি হিসেবে কাজ করে।
সেন্সরি এক্টিভিটির কিছু উদাহরণ:
- বালি বা পানি দিয়ে খেলা
- আটা বা রঙ দিয়ে আঁকা
- খেলনা চিপস/বল চেপে ধরা
- গান শুনে নাচা
- সুগন্ধি/দুর্গন্ধি জিনিস ঘ্রাণ নেওয়া
- মুখে নানা স্বাদের খাবার দেওয়া
- দোলনায় দোলা খাওয়া
- ভারি কিছু টেনে আনা বা ঠেলা
০-১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সেন্সরি এক্টিভিটি
মূল লক্ষ্য: দেখা, শোনা, স্পর্শ করার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা অর্জন। যেমন :
✅ রঙিন ঝুলন্ত খেলনা দেখা
✅ নরম কাপড় বা স্পঞ্জ স্পর্শ করা
✅ মা-বাবার গলা ও মুখের আওয়াজ শোনা
✅ হালকা গন্ধ (ফুল, সাবান) শুকানো
✅ পানিতে হাত-পা নাড়ানো (বাথ টাইমে)
✅ বিভিন্ন স্বাদ চেখে দেখা (৬ মাসের পর)
১-২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য
মূল লক্ষ্য: স্পর্শ, চলাফেরা, ধ্বনি বুঝে প্রতিক্রিয়া। যেমন :
✅ রঙিন বল নিয়ে খেলা
✅ বুদবুদ ফোটানো ও ধরার চেষ্টা
✅ মাটির/আটার খেলনা তৈরি
✅ পানি দিয়ে ঢালা/ভরার খেলা
✅ গান ও রাইম শুনে নাচ
✅ ঠুসঠুসে খেলনা চেপে ধরা
✅ ফোম ব্লক দিয়ে গড়াগড়ি
৩-৫ বছর বয়সী (প্রি-স্কুল) শিশুদের জন্য
মূল লক্ষ্য: ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে চিন্তা ও মোটর স্কিলের সমন্বয়। যেমন :
✅ বালি দিয়ে খেলা (sand play)
✅ রঙ/পেইন্ট দিয়ে আঁকা
✅ ময়দা দিয়ে গড়া/কাটা
✅ গান শোনার সঙ্গে তাল মেলানো
✅ গন্ধ চিনে বলা – (লেবু, এলাচ, পেঁয়াজ)
✅ ভারি জিনিস টানা/ঠেলা (বালতিভর্তি পানি, ট্রলি টানা)
✅ শরীরের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করে চেনা
৬ বছর ও তার উপরের শিশুদের জন্য
মূল লক্ষ্য: ইন্দ্রিয়, সমস্যা সমাধান ও একাগ্রতা বাড়ানো। যেমন :
✅ রন্ধনশিল্পে অংশগ্রহণ (কুকি বানানো, ময়দা মাখানো)
✅ নানা স্বাদের খাবার শনাক্ত করা (টেস্ট টেস্টিং গেম)
✅ ধাঁধা বা স্পর্শে জিনিস চেনার খেলা
✅ ব্যালান্সিং খেলা (এক পা দাঁড়িয়ে থাকা, দোলনা)
✅ স্লাইম বা ক্লে দিয়ে নানা আকৃতি বানানো
✅ চোখ বেঁধে গন্ধ বা স্পর্শে জিনিস চিনে ফেলা
✅ শরীরকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ঘোরানো (Yoga for kids)
লেখক : তামান্না আফরোজ, কোঅর্ডিনেটর, ইএমআই স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টার।
কমেন্ট