অকুপেশনাল থেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা ও সেবা, যার মাধ্যমে একজন শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীকেও স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা প্রতিবন্ধী শিশুদের যেমন—অটিজম, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-অ্যাকটিভ ডিস-অর্ডার বা এডিএইচডি, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, স্পাইনা বাইফিডা, বাঁকানো পা বা ক্ল্যাব ফিট, গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএস, মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস ইত্যাদির চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকেন।
একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট প্রথমে পর্যবেক্ষণ করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে রোগ শনাক্তকরণ, শিশুর মেডিক্যাল ইতিহাস বা জন্ম নেওয়ার আগে গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং জন্মের পর থেকে শিশুর বিকাশজনিত বিভিন্ন সমস্যার বিস্তারিত ইতিহাস, শারীরিক বিকাশ, বুদ্ধিগত বিকাশ, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের মুভমেন্ট, হাতের ছোট ছোট মাংশপেশির শক্তি, শরীরের বড় বড় মাংসপেশির শক্তি, শরীরের বিভিন্ন অনুভূতি যেমন—দেখা, শোনা, ধরা, ঘ্রাণ, স্বাদ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা।
এ ছাড়া খাবার খাওয়ার দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা করেন।
থেরাপিস্টরা চিকিৎসার মাধ্যম হিসেবে খেলাকে ব্যবহার করে থাকেন। খেলার মাধ্যমেই থেরাপিগুলো দেওয়া হয়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক করার জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের টেকনিক অবলম্বন করেন।
তাদের হাতের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্যও চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফলে শিশু সঠিকভাবে খেলনা ধরতে ও ছাড়তে শেখে।
এই থেরাপিতে লেখার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রাক-লেখার দক্ষতার ধাপগুলো আয়ত্ত করা হয়, যার মাধ্যমে শিশু হাত দিয়ে লিখতে শেখে।
শিশুকে দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন—খাওয়া, গোসল করা, টয়লেট করা, জুতা পরা, জামা পরা ইত্যাদি কাজ অ্যাকটিভিটি অ্যানালিসিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
শিশুকে খারাপ আচরণের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের পজিটিভ আচরণ শেখানো হয়। ফলে খারাপ আচরণগুলোর পরিবর্তন হয়। যেমন—যে শিশু অন্যকে আঘাত করে, সেই শিশু যদি বাসায় ছোট ছোট কাজে অংশগ্রহণ ও উৎসাহ দেওয়া হয়, তাহলে তার খারাপ আচরণগুলো পরিবর্তন হবে ধীরে ধীরে। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট শিশুকে নিজের হাত দিয়ে খাবার খাওয়া, লেখা ইত্যাদি শিখিয়ে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন—চামচ, গ্লাস, চিরুনি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজে নিজে কাজ করার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকেন।
এ জন্য নানা ধরনের বিশেষ চেয়ার, দণ্ডায়মান কাঠামো, চলমান কাঠামোসহ বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশু অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো জীবন যাপন করতে পারে। শরীরের অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে শিশুর অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক হয়ে শিশুর চঞ্চলতা অনেকাংশে কমে যায়। সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক টেকনিক ব্যবহার করা হয়। শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য অকুপেশনাল থেরাপিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হয়, যার মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে।
লেখক : অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।
কমেন্ট